স্বদেশ ডেস্ক:
তেল সরবরাহে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাজের ব্যাপ্তি দিন দিন বাড়ছে। সারা দেশকে তেলের পাইপলাইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টায় বিপিসি। এর জন্য বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পও চলমান। কোনো কোনোটির কাজ শেষ হয়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। তাই পাইপলাইনে তেল সরবরাহ, রক্ষণাবেক্ষণ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, পাইপলাইনের কারিগরি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় দেখভাল বা সমন্বয়ের জন্য আলাদা একটি কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের এই সংস্থাটি। এ বিষয়ে পাঠানো প্রস্তাব এরই মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ জানায়, ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ৯১৭তম সভায় পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিপিসি। পরে ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর সংস্থার পরিচালককে (অপারেশন) আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। নানা বিষয় পর্যালোচনা করে সেই কমিটি চলতি বছরের ৩১ মার্চ প্রতিবেদন জমা দেয়। তারা যেসব বিষয় পর্যালোচনা করেছে সেগুলোর মধ্যে ছিল- প্রস্তাবিত কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিক্যাল অব অ্যাসোসিয়েশন, কোম্পানির আয়ের উৎস, সম্ভাব্য কার্যক্রম, অনুমোদিত মূলধন ও পরিশোধিত মূলধন, জনবল কাঠামো। পরে কমিটি কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এবং বিদ্যমান বিধিবিধান অনুসরণ করে কোম্পানি গঠনের বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। বিপিসির প্রস্তাবনায় কোম্পানির নাম ছিল
‘পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন পিএলসি’ বাবা পিটিপিএলসি। তবে মন্ত্রণালয় বিপিসির প্রস্তাবিত নাম পরিবর্তন করে ‘পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন পাবলিক কোম্পানি’ গঠনের অনুমোদন দিয়েছে।
জানা যায়, কোম্পানির নাম ছাড়াও বিপিসির প্রস্তাবনার মধ্যে অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন হবে এক শ কোটি টাকা। এ ছাড়া যথাযথ অনুমোদনসাপেক্ষে সংস্থার আইন উপদেষ্টার মাধ্যমে প্রস্তাবিত কোম্পানির রেজিস্ট্রেশনের জন্য ‘রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্ম’ বরাবর আবেদন করে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা নেওয়া। রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্তির পর প্রস্তাবিত কোম্পানির আয়ের উৎস, সম্ভাব্য কার্যক্রম, সাংগঠনিক কাঠামো, অফিস স্থাপনা ইত্যাদিসহ অন্যান্য বিষয় পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা। আর প্রস্তাবিত কোম্পানির আয়ের উৎস হিসেবে জ্বালানি তেল সঞ্চালন বাবদ বিপণন কোম্পানিগুলো থেকে নির্ধারিত হারে সার্ভিস চার্জ আদায় করা হবে।
এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘পেট্রোবাংলার অধীনস্থ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) আদলে বিপিসি একটি কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিপিসির আরও সাতটি কোম্পানি আছে। তবে সব কোম্পানি তাদের নিজস্ব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতেই হিমশিম খাচ্ছে। ফলে পাইপলাইনে তেল পরিবহন, পাইপলাইন স্থাপন, অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও সার্বিক সমন্বয়ের জন্য নতুন একটি কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
বিপিসি মূলত বিদেশ থেকে ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল বিদেশ থেকে এনে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা- এই তিনটি বিপণন কোম্পানির মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আর এসব কোম্পানিতে সিস্টেম লসের নামে শত শত কোটি টাকার তেল চুরির অভিযোগ অনেক পুরানো। মূলত আমদানি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন ডিপোতে পৌঁছে দেওয়ার যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া, সেখানে তেল চুরির এক বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। বছরের পর বছর এসব অভিযোগ থাকলেও কার্যত তেল চুরি বন্ধ করতে পারছে না বিপিসি। তাই লাইটার জাহাজ কিংবা ট্যাংকলরি এড়িয়ে পাইপলাইনে তেল পরিবহনের বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিপিসি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম তেল পাইপলাইন, বাংলাদেশ-ভারত তেল পাইপলাইন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ পিতলগঞ্জ থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত তেল পাইপলাইন, নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল থেকে ফতুল্লা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত তেল পাইপলাইন। এসব পাইপলাইনের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্যই আলাদা কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে বলে জানায় বিপিসি।
তেল বিপণন কোম্পানিগুলো ছাড়াও বিপিসির আরও যেসব কোম্পানি রয়েছে সেগুলো হলো- ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, এলপি গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্র্যান্ডিং লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। তবে তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর বাইরে বাকিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা খুবই নাজুক।